কৃত্রিম উপগ্রহ নানান রকম কাজে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার অনুসারে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন— যোগাযোগ উপগ্রহ, আবহাওয়া উপগ্রহ পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ, সামরিক বা গোয়েন্দা উপগ্রহ, নৌপরিবহন উপগ্রহ ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক উপগ্রহ।
যোগাযোগ উপগ্রহ
আমরা অনেকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা অন্য যেকোনো দেশে আত্মীয়-স্বজনের সাথে টেলিফোনে কথা বলে থাকি। আমরা যখন টেলিফোনে অন্য দেশের কারো সাথে কথা বলি, তখন আমাদের দেশের কোনো ডিশ এরিয়েল থেকে একটি বেতার সঙ্কেত কৃত্রিম উপগ্রহে প্রেরিত হয়। উপগ্রহটি সঙ্কেতটিকে অপর দেশের কোনো একটি ডিশ এরিয়েলে পাঠিয়ে দেয়, সেখান থেকে যার সাথে কথা বলছি তার টেলিফোনে পৌঁছায়।
এছাড়া আমরা বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক গেইম টেলিভিশনে দেখে থাকি। অন্যদেশ থেকে একইভাবে বেতার সঙ্কেত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছায়। যে দেশে খেলা হচ্ছে সে দেশ থেকে ডিশ এরিয়েলের মাধ্যমে একটি সঙ্কেত উপগ্রহে পাঠানো হয়। উপগ্রহ সঙ্কেতটি পুনরায় আমাদের দেশের কোনো ডিশ এরিয়েলে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছে। কৃত্রিম উপগ্রহ এখানে রিলে স্টেশনের কাজ করে। এই উপগ্রহ টেলিভিশন প্রোগ্রাম ও টেলিফোন সংবাদ পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বয়ে নিয়ে যায়। এর নাম তাই যোগাযোগ উপগ্রহ।
আবহাওয়া উপগ্রহ
আমরা টেলিভিশন ও রেডিওতে আবহাওয়ার খবর শুনি এবং পত্রিকায় আবহাওয়ার খবর পড়ি। এসব মাধ্যম আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস কোথা থেকে পায়? আবহাওয়া উপগ্রহ আবহাওয়ার পূর্বাভাসদানকারী ব্যক্তিদের জানিয়ে দেয় ঐ দিনের বা পরবর্তী কয়েক দিনের আবহাওয়া কেমন হবে, কোথায় মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে, কোন দিকে মেঘ যাচ্ছে বা কোথায় কখন বৃষ্টি হতে পারে। বায়ু প্রবাহ, সাইক্লোন সৃষ্টি হওয়া, কোথায় ঘনীভূত হচ্ছে, কোন দিকে আঘাত হানতে পারে তার সবকিছু এই উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিতে পারে। এজন্য এই উপগ্রহের নাম আবহাওয়া উপগ্রহ।
পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ
এই উপগ্রহ পৃথিবীপৃষ্ঠের সুস্পষ্ট চিত্র দিতে পারে। সমুদ্রে কোন জাহাজ থেকে তেল চুইয়ে কোথায় পরিবেশ দূষণ করছে, কোন শহরের বায়ু দূষিত ও ময়লা তা এই উপগ্রহের সাহায্যে ছবি তুলে জানা যেতে পারে। কোন মাঠে ফসল ভালো হচ্ছে, কোনো ফসলে রোগবালাই বা পোকামাকড় আক্রমণ করেছে কি না, তা জানতে তথ্য ও ছবি এই উপগ্রহ পাঠাতে পারে। বনে কোথায় আগুন লেগেছে, কোনো জাহাজের যাত্রাপথে হিমবাহ আছে কি না তা জানতে এই উপগ্রহ সহায়তা করতে পারে। মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ নির্ণয়ের জন্যও এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।
সামরিক বা গোয়েন্দা উপগ্রহ
গোয়েন্দার কাজ করার জন্য সামরিক বাহিনীতে এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয় তাই এর নাম গোয়েন্দা উপগ্রহ। প্রতিপক্ষ যোদ্ধারা কোথায় লুকিয়ে আছে, গোপনে তারা কোথাও অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে কি না, কোনো গোপন আক্রমণ হচ্ছে কি না ইত্যাদি খবর সংগ্রহের জন্য এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।
নৌপরিবহন উপগ্রহ
আমরা গাড়ি, বিমান বা জাহাজে ভ্রমণ করে থাকি। বিশাল সমুদ্রে জাহাজ কী করে এর অবস্থান নির্ণয় করে? কোন বিমান আকাশে কোথায় আছে তা কী করে জানে? এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবার সময় কী করে বুঝতে পারে কোথায় আছে? গাড়ি, সামুদ্রিক জাহাজ ও বিমান এদের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য নৌপরিবহন উপগ্রহের সহায়তা নিয়ে থাকে।
জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক উপগ্রহ
এই উপগ্রহে রাখা টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণযন্ত্র মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দিয়ে
থাকে।
নতুন শব্দ : মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, ছায়াপথ, কৃত্রিম উপগ্রহ
এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-
- গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, গ্যলাক্সি ইত্যাদির মাঝখানে যে খালি জায়গা থাকে তাকে মহাকাশ বা মহাশূন্য বলে । মহাকাশ কোনো পদার্থ দিয়ে তৈরি নয়।
- সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, তারা, মহাকাশ, ছায়াপথ, গ্যালাক্সি ইত্যাদি দেখা না দেখা সবকিছুকে নিয়ে মহাবিশ্ব।
- মহাবিশ্বের যেসব অংশে পদার্থ বা বস্তু বেশি জড়ো বা ঘনীভূত হয়েছে তাদের বলা হয় গ্যালাক্সি ।
- যে গ্যালাক্সিতে আমরা বাস করি তার নাম ছায়াপথ। এই ছায়াপথেই রয়েছে সৌরজগৎ।
- সূর্য একটি নক্ষত্র। সূর্যের রয়েছে আটটি গ্রহ। এরা হলো- বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন।
- নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে যারা ঘুরে তাদের বলা হয় গ্রহ। গ্রহকে কেন্দ্র করে যারা ঘুরে তাদের বলা হয় উপগ্রহ।
- মানুষের পাঠানো যেসব মহাকাশযান পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে তাদের বলা হয় কৃত্রিম উপগ্রহ।
- কাজ অনুসারে কৃত্রিম উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে, যেমন- যোগাযোগ উপগ্রহ, আবহাওয়া উপগ্রহ, পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ, সামরিক বা গোয়েন্দা উপগ্রহ, নৌপরিবহন উপগ্রহ, জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক উপগ্রহ।
আরও দেখুন...